তোফাজ্জল সাহেব একজন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমান। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি সময় পেলেই সুন্নত ও নফল নামাজের মাধ্যমে তিনি ইবাদতে মশগুল থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওনার মনে একটি বিষয় নিয়ে অনেক কষ্ট। পবিত্র রমজান মাসে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি বেশীরভাগ রোজা রাখতে পারেন না। বাস্তব অর্থে খোঁজ নিলে দেখা যাবে শুধু তিনিই নয়, এমন অনেকেই আছেন যারা রোজার সময়টাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পুষ্টিবিদগণ মনে করেন, এর মূল কারণ খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন। হঠাৎ এ পরিবর্তন শরীর মানিয়ে নিতে না পারায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই যতটা সম্ভব সুস্থদেহে রোজা রাখার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা চাই কিছু বিশেষ খাবার। যা খেতেও সুস্বাদু এবং পুষ্টি-গুণেও ভরপুর।
যেমন ধরুন, ইফতার শুরু করতে পারেন পুষ্টিকর দই-চিঁড়া দিয়ে। সেহরি পর্যন্ত খেতে পারেন ইচ্ছামত। সুস্বাদু এই খাবার পানির চাহিদা মেটাবে এবং ক্ষুধা দূর করবে। পাশাপাশি নানান পুষ্টির চাহিদা পূরন করবে এবং এটি বানানোও খুব সহজ।
প্রতিদিনের ফলের চাহিদা পূরন করতে খেতে পারেন ফ্রুট কাস্টার্ড। দুধ, খেজুর এবং বিভিন্ন ফলের মিশ্রণের এই খাদ্যটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
চিকেন সালাদ সব বয়সের মানুষের জন্য একটি অসাধারণ খাবার যা ইফতারে, রাতের খাবারে এবং সেহেরিতে অনায়াসে খেতে পারবেন।
চলুন দেখে নেই মজাদার ও পুষ্টিকর এ খাবারগুলো তৈরির প্রস্তুত প্রনালী।
* দই -চিঁড়া
উপকরনঃ
মিষ্টি দই ১ কাপ, চিঁড়া আধা কাপ, পাকা কলা ১টি, পাকা আম ১ কাপ, লবণ ১ চিমটি, চিনি বা মধু স্বাদমতো।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
১. প্রথমে চিঁড়া ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
২. তারপর একটি বাটিতে দই ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে ফেটে নিন।
৩. ফেটানো দইয়ে চিঁড়া মেখে এক ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন।
৪. স্বাদমতো চিনি বা মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
৫. পরিবেশনের ঠিক ৫ – ১০ মিনিট আগে আম ও কলার সঙ্গে দই-চিড়া চামচ দিয়ে মেশাতে হবে।
৬. তারপর আম ও কলার টুকরা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
৭. চাইলে আপনার ইচ্ছামতো অন্য ফল দিয়েও সাজিয়ে নিতে পারেন।
উপকারীতাঃ
সারাদিনের পানির চাহিদা মিটানোর সাথে সাথে ক্ষুধা মিটিয়ে শরীরকে তরতাজা করতে এ খাবারটি বেশ কার্যকর। সেই সাথে বাড়াবে হজম প্রক্রিয়া ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। এছাড়া পেট ঠান্ডাকারী খাবার হিসেবে দই – চিঁড়ার জুড়ি নেই। চিঁড়ায় পটাসিয়াম এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকার জন্য কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক উপকারি।
* ফ্রুট কাস্টার্ড
উপকরণঃ
দুধ ১ লিটার, ডিমের কুসুম ২টি, কাস্টার্ড পাউডার ৩ টেবিল চামচ, চিনি স্বাদমতো, কিসমিস ২ টেবিল চামচ, কাঠ বাদাম ২ টেবিল চামচ, ফল (কলা, আম, আপেল, আঙুর, চেরি ফল,আনার, স্ট্রবেরি ইত্যাদি) কিউব করে কাটা প্রায় ২ কাপ, খাস ফুডের আজওয়া খেজুর কাটা ১/২ কাপ।
প্রস্তুত প্রনালীঃ
১. প্রথমে ডিমের কুসুম দু’টি একটি বাটিতে নিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন।
২. এবার কাস্টার্ড পাউডার দিয়ে ভালো করে মেশান এবং নরম মিশ্রণ তৈরি করুন।
৩. একটি পাত্রে দুধ নিয়ে অল্প আচেঁ জাল দিন।
৪. দুধ একটু ঘন হয়ে এলে চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন।
৫. অল্প আঁচে ডিম এবং কাস্টার্ডের মিশ্রণটি দুধের সঙ্গে ঢেলে দিয়ে নাড়তে থাকুন।
৬. মিশ্রণটি একদম অল্প আঁচে রান্না করতে হবে এবং বিরতিহীনভাবে নাড়তে হবে যাতে কাস্টার্ড জমে না যায়।
৭. কাস্টার্ড হালকা ফুটে উঠলে নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন।
৮. তারপর ফ্রিজে রেখে পছন্দমতো ফল দিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার ফ্রুট কাস্টার্ড।
উপকারীতাঃ
অনেকের শুধু শুধু ফল খেতে ভালো লাগে না, ফ্রুটস কাস্টার্ড তাদের ক্ষেত্রে আনবে বৈচিত্র্য। নানান স্বাদের ও গুনের ফলে ভরপুর এ কাস্টার্ড সারাদিনের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে। শরীরকে রাখবে ফিট। তাই চেষ্টা করবেন এ রমজানে প্রতিদিনের খাবার টেবিলে এটিকে রাখতে।
* চিকেন সালাদ
উপকরণঃ
হাড় ছাড়া মুরগির মাংস ১ কাপ, ময়দা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, পাপরিকা পাউডার ১ চা চামচ / লাল মরিচ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, গোল মরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ, অরিগানো ১/২ চা চামচ, শুকনা মরিচ টালা গুঁড়ো অল্প, টমেটো কেচাপ ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমত, তেল ১ টেবিল চামচ।
সালাদের জন্য যা লাগবেঃ
শসা টুকরা / কুচি , গাজর, টমেটো ,লেটুস কুচি এবং ভাঁজা মচমচে নুডুলস, লেবুর রস, অল্প অলিভ ওয়েল।
প্রস্তত প্রণালীঃ
১. তেল ছাড়া মাংসের সব উপকরন মাংসের সাথে মিশিয়ে মেরিনেট করে রাখুন ১০ মিনিট। এক ঘণ্টা হলে আরো ভালো।
২. প্রথমে প্যানে তেল দিয়ে তেল গরম হলে মেরিনেট করে রাখা মাংস দিয়ে মিডিয়াম আঁচে রান্না করুন। ভাজা ভাজা হলে নামিয়ে নিন।
৩. এখন সালাদের জন্য কেটে রাখা শসা, গাজর, টমেটো ,লেটুস কুচিতে অল্প লবণ, ভাজা মচমচে নুডুলস, লেবুর রস আর অল্প অলিভ ওয়েল দিয়ে মেখে নিন। (লবণটা খেয়াল রাখতে হবে কারন রান্না করা মাংসতেও লবণ দেয়া আছে)।
৪. প্লেটে পরিবেশনের সময় আগে মাখানো সালাদ সাজিয়ে নিন। এর উপর রান্না করা মাংস ছড়িয়ে দিন।
৫. চাইলে কিছু ভাজা বাদাম উপরে ছিটিয়ে পরিবেশন করতে পারেন। এতে পরিবেশনটা দেখতেও ভালো লাগবে।
উপকারীতাঃ
গরমে সব ধরনের সালাদই স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। আর চিকেন সালাদ অত্যাধিক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি খাবার। এর আমিষ আপনার পেশির শক্তি বাড়িয়ে তুলবে এবং তাজা সবজি জোগান দেবে অ্যান্টি অক্সিড্যান্টের। এ গরমের রমজানে এই সালাদ আপনার শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সুস্থ রাখুক। এই রমজানে সুস্থ দেহে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করার সুযোগ দিক। নিজের, পরিবারের এবং আশেপাশের নিম্ন আয়ের মানুষের খেয়াল রাখবেন। ইনশাআল্লাহ রমজান মাসের এই পবিত্র সময়গুলো সকলের ভালো কাটবে।
One thought on “রমজানের কিছু রেসিপি”