অন্যান্য

মসলা নিয়ে কিছু কথা

ভালো রান্না করা একটা শিল্প। তবে ভাল রান্না করতে শিল্পীর যেমন দরকার তেমনি দরকার মসলার সঠিক ব্যবহার। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমানে মসলা ব্যবহার করতে পারলে রান্নায় আসে মন ভোলানো স্বাদ। প্রাচীনকাল থেকে মানুষের রসনা বিলাসের সঙ্গী এটি। সকল খাবারেই এটি ব্যবহার করা হয়। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে প্রথম ও প্রধান বাণিজ্যিক পণ্য ছিল এটি।

খ্রিস্টপূর্বাব্দে এটি প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মসলার খোজে এসেই কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেন। প্রাগৈতিহাসিক কালে এর বাণ্যিজ্য করেছে ’ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী’। মূলত ভারতবর্ষে এটির প্রচলন ঘটে এই কোম্পানীর হাত ধরেই। বাংলাদেশে গবেষণার জন্য রয়েছে “মসলা গবেষণা কেন্দ্র” যা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর অন্তর্গত। এটি বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ে অবস্থিত। এর আয়তন ২৮ হেক্টর। এর অধীনে তিনটি আঞ্চলিক কেন্দ্র রয়েছে সেগুলো হলো গাজীপুর, মাগুরা ও কুমিল্লা। এছাড়া এই কেন্দ্রের অধীনে ৭টি উপ-কেন্দ্র রয়েছে সেগুলো হলো-পঞ্চগড়, সিলেট, মৌলভিবাজার, লালমনিরহাট, বরিশাল, ফরিদপুর ও খাগড়াছড়ি।

মসলা হলো যে কোনো উদ্ভিদ বা উদ্ভিদের অংশ যেমন ফুল, ফল, বীজ, কুঁড়ি, পাতা, বাকল কিংবা মূল যা খাবারের স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। প্রকৃতপক্ষে এর কোনো পুষ্টিমান নেই তবে এতে উপস্থিত নানা ধরনের ফাইটোকেমিক্যালস উপস্থিত থাকে যা খাবারের স্বাদ আনতে ভূমিকা পালন করে থাকে।

আমাদের দেশে নানা ধরনের মসলার প্রচলন রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মসলা হলো-

আদা, পিয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ, শুকনো মরিচ, আদা, আমলকি,আনার,তুলসি,কাঠবাদাম, এলাচ,দারুচিনি, লবঙ্গ, ধনে, মিক্সড মসলা, গোলাপ জল, হলুদ গুড়া, কাঁচা হলুদ, ধনে পাতা, ধনের বীজ, হরিতকি, তেঁতুল, জয়ফল, জয়ত্রী, জিরা, বারসুঙ্গা, নিমপাতা, কাজুবাদাম, কালো মরিচ, গোল মরিচ, কালোজিরা, মেথি পাতা ও ফল, কাবাব চিনি, জাফরান (স্যাফ্রন), খেজুর, পোস্ত, লেবু, পেঁয়াজের কালি, পেঁয়াজের পাতা, পাঁচ ফোড়ন, পিপুল, ক্যাপসিকাম, পাঁচ ফোড়ন, কাঁচা রাই, কাঁচা সরিষা, সরিষার তেল, মৌরি, সয়াবিন তেল, তিসি তেল, নারকেল তেল, শুকনো আদা গুড়া, সিরকা, তেজপাতা ইত্যাদি।

বাঙলী রসনার নিত্যদিনের সঙ্গী এই মসলা। রান্নায় পদের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মসলা ব্যবহৃত হয়। বর্তমান সময়ে মসলা ছাড়া রান্না যেন কল্পনাই করা যায়না। তাইতো মসলা এখন রান্নাঘরের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। খাবারের স্বাদ ও সুগন্ধ আনতে চাইলে মসলা অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। দেশে এখন মসলার ব্যবহার নানাবিধ। বিশেষ করে মিক্সড মসলা আমাদের দেশে খুব বেশি পরিমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাইতো নানা ধরনের মসলা ব্যবহার করে দেশেই তৈরী হচ্ছে নির্দিষ্ট খাবারের জন্য নির্দিষ্ট মসলা।

মসলা যেমন রান্নায় আনে নিখুত স্বাদ ও সুগন্ধ তেমনি এর রয়েছে নানা ধরনের রোগ উপশমকারী গুণ। মসলা যেহেতু উদ্ভিদের অংশ তাই এতে উপস্থিত থাকে নানা ধরনের ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস যেমন ক্যাপসাইসিন, বিটা ক্যারোটিন, ফাইটোস্টেরল, ফাইটোস্ট্রোজেন, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-সি, ফ্লাভোনোয়িডস, অ্যন্থোসায়ানিন, অ্যান্থোজ্যানথিন, অ্যালকালোয়েডস, টারপিনোয়েডস, স্যাপেনিন, অ্যালিসিন, অ্যালিন, অর্গানো-সালফার যৌগ, পেকটিন, সেলুলোজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ইত্যাদি। এছাড়াও আরও অনেক ধরনের যৌগ উপস্থিত থাকে। এই ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসগুলোই মূলত আমাদের দেহের নানা ধরনের ঘাতক ব্যাধি প্রতিরোধে করে থাকে। ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনিতে পাথর, বুড়িয়ে যাওয়া, হৃদরোগ, অ্যাজমা, দাঁতের ক্ষয়, আর্থাইটিস, পারকিনসন অ্যালঝেইমার ডিজিজ ইত্যাদি রোগ ঝুকি কমে যায় কেউ যদি নিয়মিত মসলা খায়।

সম্প্রতি করোনাভাইরাস আক্রমণের পর থেকে পুরো বিশ্ব টালমাটাল। এখন অব্দি কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। তাই খাদ্যাভাস ও জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তনই একমাত্র ভরসা। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে হলে চাই ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। আর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে নিয়মিত উদ্ভিজ্জ খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। সে হিসেবে আমরা যদি প্রতিদিন পরিমিত পরিমানে এটি খাদ্য তালিকায় রাখি তাহলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। আমরা সুস্থ সবল জীবন যাপন করতে পারবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *